Bibaho prosonge
আমাদের জীবনে চলার পথে জানা-অজানায় নানা-রকম ভুলভ্রান্তি হয়, তার মধ্যে অনেক কিছু আমরা শুধরে নিতে পারি। কিন্তু বিবাহে যদি ভুল হয়ে যায়, সেইভুল আর ঠিক করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, নিজেই তো বটেই, সমাজ-পারিপার্শিক সমস্ত কিছু এর দ্বারা ধ্বংসের দিকে একটু-একটু করে এগিয়ে চলে। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর বারংবার বিবাহ সম্পর্কে সাবধান করেছেন। এখানে সংক্ষেপে বিবাহ সম্পর্কে তাঁর বিভিন্ন বলা তুলে ধরার চেষ্টা করছি ।। --
--------------
★বর্ণ চার প্রকার- বিপ্র, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র।
★গোত্র- গো-শব্দের উৎপত্তি গম্-ধাতু থেকে, অর্থ- গতি। আর 'ত্র' হ'ল ত্রৈ-ধাতু থেকে, মানে ত্রাণ করা। তাই গোত্র মানে দাঁড়াবে বংশের ধারা বা গতি যাঁর মাধ্যমে রক্ষিত হয় সেই স্মরনীয় পিতৃপুরুষ বা ঋষি। তিনিই গোত্র পিতা।
★প্রবর- প্রত্যেক গোত্রেরই একাধিক প্রবর থাকে। প্রবর মানে বংশের মধ্যে প্রকৃষ্ট বরণীয় ব্যক্তি। গোত্র প্রবর্ত্তক ঋষির ঔরসজাত সন্তান বা কৃষ্টিজাত সন্তানদের মধ্যে যিনি বা যাঁরা ভক্তি, জ্ঞা ন, গুণ, চরিত্র, কর্মদক্ষ, সাধনার দিক দিয়ে সবচেয়ে প্রকৃষ্ট বরণীয় তিনি বা তাঁরাই প্রবর নামে অভিহিত হয়ে থাকেন। এখানে মনে রাখতে হবে ভিন্ন গোত্র হলেও প্রবর এক হতে পারে। যেমন, বাৎস ও সাবর্ণ্য আলাদা গোত্র। কিন্তু এই দুই গোত্রের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ, কারন এই দুই গোত্রের প্রবর একই। অনেক সময় এমন হয় -কারো গোত্রের পাঁচটি প্রবর, তার মধ্যে কোন একটি প্রবর অন্য গোত্রের সাথে মিলে যাচ্ছে। সেখানে ঐ গোত্র দুটি ভিন্ন হলেও বিবাহ নিষিদ্ধ। যেমন, অত্রি ও কাত্যায়ন এই দু'টি গোত্রের তিনটি করে প্রবর, তার মধ্যে একটি প্রবর উভয়ের এক। অতএব, অত্রি গোত্রের সাথে কাত্যায়ন গোত্রের বিবাহ অবিধেয়।
যদি একটি প্রবরও মিলে যায় তবে বুঝতে হবে অতীতে দুটি বংশধারা কোনওসময় এসে মিলে গিয়েছিল। এইভাবে রক্তের মিল হলে, ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে হলে যা হওয়ার তাই হবে।
ফলে এই বিবাহ নিষিদ্ধ। তাই শ্রীশ্রীঠাকুর- বললেন-" আপৎকালেও জনন-অনুশাসনকে অগ্রাহ্য ক'রো না।"(বিবাহ-বিধায়না,১৪৯)।
" আর্য্যমতে বিবাহে "গোত্রের" অব্শ্য প্রয়োজন । বিভিন্ন গোত্র রয়েছে । তারমধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার সংগ্রহ করা গোত্রবিবরন দিলাম । যেখানে ভুল আছে কেউ সংশোধন করে দিলে উপকৃত হব । নতুন কিছু জানা থাকলে তা'ও সংযোজিত করবেন ।
--- গোত্রের নাম --- ।↓। ---প্রবর----
*বশিষ্ঠ । বশিষ্ঠ, অত্রি, সাঙ্কৃতি
*অত্রি । অত্রি, আত্রেয়, শাতাতপ
*কাশ্যপ। কাশ্যপ, অপ্সার, নৈধ্রুব
*ভরদ্বাজ। ভরদ্বাজ, আঙ্গিরস, বার্হস্পত্য
*জমদগ্নি। জমদগ্নি, ঔর্ব্ব্য,বশিষ্ঠ
*বিশ্বামিত্র । বিশ্বামিত্র, মরীচি,কৌশিক
*পরাশর ও শক্ত্রি । বশিষ্ঠ, শক্ত্রি, পরাশর
*অগস্ত্য । অগস্ত্য, দধীচি, জৈমিনি
*গোতম । গোতম, বশিষ্ঠ, বার্হস্পত্য
*গৌতম । গৈাতম, আঙ্গিরস,অস্পার,
বার্হস্পত্য, নৈধ্রুব।
*শান্ডিল্য । শান্ডিল্য, অসিত, দেবল
*বাৎস । →
*সাবর্ণ। । →
*মৌদ্গল্য ।→
*সৌপায়ন । → ঔর্ব্ব্য, চ্যবন, ভার্গব, জামদগ্ন্য
আপ্নুবৎ ।
* শুনক । শুনক, শৌনক, গৃৎসমদ
*কাত্যায়ন । অত্রি, ভৃগু, বশিষ্ঠ
*আঙ্গিরস । আঙ্গিরস, বশিষ্ঠ, বার্হস্পত্য
*কৌশিক । কৌশিক, অত্রি, জামদগ্ন্য
*বৃহস্পতি । বৃহস্পতি, কপিল,পার্ব্বন
*অনাবৃকাক্ষ । গার্গ্য, গৌতম, বশিষ্ঠ
*ঘৃতকৌশিক। কুশিক, কৌশিক, ঘৃতকৌশিক
* বৃদ্ধি । কুরু, বৃদ্ধাঙ্গির, বার্হস্পত্য
*বিষ্ণু । বিষ্ণু, বৃদ্ধি, কৌবর
*কান্ব । কান্ব, অশ্বথ, দেবল
* কান্বায়ণ । কান্বায়ণ, আঙ্গিরস,ভরদ্বাজ
অজমীঢ় বার্হস্পত্য
*অব্য । অব্য, বলি, স্বারস্বত
*কৌন্ডিল্য । কৌন্ডিল্য, স্তিমিক,কৌৎস
*জৈমিনি । জৈমিনি, উতথ্য, সাঙ্কৃতি
*আলম্ব্যায়ন । আলম্ব্যায়ন, শালঙ্কায়ন
শাকটায়ন
*বাসুকি । অক্ষোভ্য, অনন্ত, বাসুকি
*কাঞ্চন। । অশ্বথ, দেবল, দেবরাজ
*আত্রেয় । আত্রেয়, শাতাতপ, সাংখ্য
*কৃষ্ণাত্রেয় । কৃষ্ণাত্রেয়, আত্রেয়,আবাস
*সাঙ্কৃতি । অব্যাহ, অরোত্রি, সাঙ্কৃতি
*বৈয়াঘ্যপদ্য । সাঙ্কৃতি
*গর্গ । মান্ডব্য, কৌস্তভ, গার্গ্য
(তবে মৎসপুরাণ অনুযায়ী গর্গ গোত্রের
পাঁচটি প্রবর -- অঙ্গিরা, বৃহস্পতি, শিন,
গর্গ ও ভরদ্বাজ)।।
★ চারপ্রকার বর্ণের প্রতিলোমজাত সন্তানদের ছয়
ভাগ করা হয়েছে।
১। ক্ষত্রিয়ের বিপ্রজাত কন্যাতে= সূত
২। বৈশ্যের ক্ষত্রিয়জাত কন্যাতে= মাগধ
৩। বৈশ্যের বিপ্রজাত কন্যাতে = বৈদেহ
৪। শুদ্রের বৈশ্যাজাত সন্তান = আয়োগব
৫। শুদ্রের ক্ষত্রিয়জাত সন্তান। = ক্ষতা
৬। শুদ্রের বিপ্রজাত কন্যাতে সন্তান=চন্ডাল।
প্রতিলোমজাত ছেলে সন্তানদের বিবাহ নিষিদ্ধ। কিন্তু কন্যার বিবাহ দেয়া যাবে তবে তা অবশ্যই উচুবর্ণে।
পরপর সাত পুরুষ ঐরকম শ্রেয় বরে বিবাহ হবার পর প্রতিলোম কন্যার প্রতিলোমের কুপ্রভাব দুর হতে পারে।(যাজ্ঞবল্ক-সংহিতা,১ম অধ্যায়)।।
★ চার বর্ণের অনুলোমজ সন্তানদের ছয়টিভাগ।
১। বিপ্রের ক্ষত্রিয়জাত সন্তান = মূর্ধাভিষিক্ত
২। বিপ্রের বৈশ্যাজাত সন্তান। = অম্বষ্ঠ
৩। বিপ্রের শুদ্রজাত সন্তান = পারশব
৪। ক্ষত্রিয়ের বৈশ্যজাত সন্তান_= মাহিষ্য
৫। ক্ষত্রিয়ের শুদ্রাজাত সন্তান = উগ্রক্ষত্রিয়
৬।বৈশ্যের শুদ্রজাত সন্তান। = করণ।
অনুলোমজাত সন্তানদের বিবাহ সম্পর্কে ঠাকুর বলেছেন- অনুলোমজাত ছেলেদের বিবাহ হবে সমান থাকে অর্থাৎ মাতৃবর্ণ যেমন তেমন ঘরে। আর মেয়েদের বিবাহ হবে কমপক্ষে পিতৃবর্ণে। এর উল্টোপাল্টা করলে প্রতিলোম ঢুকে যাবার সম্ভাবনা।
♥ সমান-সমাণ বর্ণে বিবাহ = সদৃশ (শ্রেষ্ঠ)।।
♠ পুরুষের বর্ণ উচ্চ এবং নারীর বংশ নীচু=
অনুলোম।।
★নারীর বংশ উচু এবং পুরুষের বর্ণ নীচ= প্রতিলোম
বংশানুক্রমিক কিছু ব্যাধি আছে সেগুলো নিয়ে খোজখবর নেয়া দরকার।
যে বংশের সাথে বিয়ে হবে তার অন্ততঃ তিন পুরুষের মধ্যে কেউ পাগল আছে কিনা দেখতে হবে, বিশেষত মাতৃকুলে। যদি থাকে তবে সেই বংশে বিয়ে দিলে সন্তানদের মধ্যে পাগল হবার সম্ভাবনা স্বীকার করে নিয়ে তবে বিয়ে দিতে হবে।
আমরা ঘোড়া-গরুর প্রজননের ব্যাপারে কখনই নিকৃষ্টজাতের ঘোড়া-ষাঁড় দ্বারা প্রজননক্রিয়া সম্পন্ন করাই না। সেখানে বীজের উকৃষ্টতা রক্ষা করে চলি। কারন সেটা জীববিজ্ঞানেরর নিয়ম।
"যত্র ত্বেতে পরিধ্বংসা জায়ন্তে বর্ণদূষকাঃ।
রাষ্ট্রিকৈঃ সহ তদ্রাষ্টাং ক্ষিপ্রমেব বিনশ্যতি।"
---- অর্থাৎ যে রাষ্ট্রে সমাজধ্বংসকারী বর্ণদূষক জাতক জন্মগ্রহন করে, রাজ্যবাসী সমস্ত প্রজাবর্গের সাথে সেই রাষ্ট্র অচিরেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।।
(১০/৬১, মনুসংহিতা
Comments
Post a Comment