*প্রশ্ন-- কতটা ঘুমনাে দরকার?*


শ্রীশ্রীঠাকুর-- আমি এমনও দেখেছি যে দশ মিনিট ঘুমে যেন পাঁচ ঘন্টা ঘুমের কাজ হ'য়ে যায় কোনও ক্লান্তি থাকে না-ever vitalised ( সর্বদা সঞ্জীবিত)। অবশ্য নামধ্যান , যাজন যত বাড়ানাে যায় , ততই এইরকম হয়। একদিনে এটা হয় না, তবে ইচ্ছা করলেই ধীরে-ধীরে ঘুম কমানাে যায়।

*প্রশ্ন-- নাম কয় বার , কতক্ষন করবো?* 


শ্রীশ্রীঠাকুর-- রাতে আর ভােরে , অন্তত আধঘন্টা ক'রে,আর একটু বেশী করতে পারলেই ভাল হয়।

*প্রশ্ন--এই (সৎ) নাম কি অন্য ভাষায় নকল হ'তে পারে?* 


উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর প্রবলভাবে অসম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন। তারপর হেসে বললেন রাধা যা' সুরতও তাই । যদিও external manifestation (বাহ্যিক প্রকাশ) অনেক রকমই হ'তে পারে। কিন্তু রাধা ও সুরত এক। আর , স্বামী মানে পরম পুরুষ।

*প্রশ্ন-- নাম করার কেমন অভ্যাস করতে হয়?*


শ্রীশ্রীঠাকুর কথাপ্রসঙ্গে বললেন নাম করার এমন অভ্যাস করে ফেলতে হয় , যেন সৰ্ব্বক্ষন চলে।কথা বলছেন , তারপর হয়ত দেখলেন আবার নাম শুরু হ'লাে , তার মানে কথার মধ্যেও নাম ছিল । ঘুম থেকে উঠে দেখলেন নাম হচ্ছে , তার মানে ঘুমের মধ্যেও হচ্ছিল। ঘুমের মধ্যেও নাম চলছে , তা' ঠিক পাওয়া যায়।

*প্রশ্ন-- ধ্যানে কি ভাবে বসা ভাল?*


শ্রীশ্রীঠাকুর ধ্যান করার সময় at ease (সহজভাবে) বসত হয় , stiffness (আড়ষ্ট শক্ত ভাব)-ও থাকবে না ,এলিয়েও পড়বে না।

*উক্ত ব্যক্তি --- বেশি সময় করতে পা ধ'রে আসে।*

শ্রীশ্রীঠাকুর পরে সেরে যায় , শুয়ে থেকে করা যায়।

*প্রশ্ন-- সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে যায়।সেদিন আর ভাল ক'রে নাম ধ্যান করা হ'য়ে ওঠে না।*


শ্রীশ্রীঠাকুর --- নামধ্যান রােজ ঠিকমত করবি।ওইদিকে কমতি হ'লে জীবনের সব ক্ষেত্রেই খাঁকতি ও অসামঞ্জস্য দেখা দেবে।... আচরণ যদি ঢিলে হয়, অজ্ঞাতসারে সেটা অনেকের মধ্যে চারিয়ে যাবে। মানুষ যদি ঠিকমতাে চলে, করে , তাতে শুধু তারই ভাল হয়, পরিবার-পরিবেশের অনেকেরই ভাল হয় তাতে।আর চলায় যদি ত্রুটি থাকে, তাতে শুধু তারই ক্ষতি হয় না , তার পরিবার-পরিবেশেরও ক্ষতি হয় তাতে।

*রেফারেন্স-(আলােচনা-প্রসঙ্গে ৯/১৪/১৫/১৬/১৭/২২/দীপরক্ষী: ৫)*





2




প্রশ্ন:ভগবানকে নিয়ে যারা চলতে চায়, পরিবার-পরিবেশের কাছ থেকে অনেক বাধাই তাদের পেতে দেখা যায়।

শ্রীশ্রীঠাকুর: প্রবৃত্তির উপাসক যারা,তারা ভগবদুপসনার পথে বাধা সৃষ্টি করবে,সে আর বিচিত্র কী?এই বাধাই কিন্তু ভক্তের আগ্রহকে আরো জ্বলন্ত ক'রে তোলে।তাই বাধা প্রকারান্তরে ভক্তির পরিপোষক হয়।--- ইষ্টকে যে চায়  সে প্রীতিকর,অপ্রীতিকর,সুবিধাজনক,অসুবিধাজনক সবরকম উপাদানকেই ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার অনুকূল ক'রে তোলে। এতেই হয় শক্তি ও ভক্তির সমন্বয়। যে-ভক্তি বাধাকে জয় করতে জানে না, সে-ভক্তি শক্তিহীন।আর, তা ভক্তি নামের যোগ্য কিনা বলা যায় না। (আঃ প্রঃ-১০ পৃঃ-১৫১)





3





#পরম_পূজ্যপাদ_বাবাই_দাদার_অমৃত_আলোচনা 


                ঠাকুরের কাছে একজন এসে বলছে ঠাকুর আমার অর্থ,মান,যশ সব চাই।ঠাকুর বলছে ও-সব চাস না পাগল, বারবার বারণ করার পরেও তাও বলছে না ঠাকুর আমার সব চাই, তারপর ঠাকুর বললেন যা দ্যাখ গা তো কি আছে।বিপুল অর্থ সঞ্চয় হলো,মান হলো যশ হলো,এই বিপুল সমুদ্রে ঠাকুর বিশ্রিত হয়েছিলো।বহু বছর কেটে গেছে প্রায় ৪০,৫০বছর কেটে গেলো মাঝখান দিয়ে ফাকের কোথা দিয়ে চলে গেলো তার আর ঠাকুর মাথায় নাই।সেইসব ভুলে গিছে অর্থ,মান,যশ সব পেয়েছে একমাত্র ঠাকুরকে ভুলে গেছে।হঠাৎ একদিন তার স্ত্রী-র বিয়োগ হলো সন্তান হানী হলো,তার পুরো ব্যবসা ধুলোসাৎ হয়ে গেলো,সে পথের ভিখারি তে পরিনত হলো, বাচাতে পারলো না এই অর্থ,মান, যশ বাচাতে পারলো না সব শেষ হয়ে গেলো।খোচাখোচা দাড়ি,একটা ভেঙ্গে পড়া মানুষ সে এসে পৌছালো ঠাকুরের কাছে অতো বছর পরে।ঠাকুর চিনতে পারছেন আর ঠাকুর তখন বৃদ্ধ,ঠাকুর বলছেন তুই অমুক না,লোক টি বললেন আজ্ঞে,প্রণাম করে সে চলে গেলো আর বললো কি যে,আমি অর্থ,মান,যশ চেয়েছিলাম আমি সব হারিয়েছি,সেদিন ঠাকুর আমাকে বলেছিলেন ও-সব চাস না,আমি তার উল্টো টা চেয়ে আমার কি অবস্থা হয়েছে।এই আমার হাল,ঠাকুর আমি সব হারিয়েছি,আর ঠাকুরকে যদি চাইতাম তালে সব পেতাম,তাই সব সময় তাকে চেতে হয় তাকে চাইলেই সব পাওয়া যায়।


।।সূত্র-বাবাই দাদার আলোচনা থেকে সংগ্রহ।।






4.



প্রশ্ন-- মানুষকে একবার কিছু দিলে সে যেন পেয়ে বসে, কেবলই চায়, তার উপায় কী?


শ্রীশ্রীঠাকুর-- (সহাস‍্যে)- সে আর বলতে? আমারও খুব দেখা আছে। তাই যাকে দাও, অন‍্যের প্রয়োজনে তাকে দিয়ে যদি না দেওয়াতে পার, তার অভাব কিন্তু ঘুচবে না। পাওয়ার বুদ্ধি, নেওয়ার বুদ্ধিই তাকে পেয়ে বসবে। আবার, না ক'রে দুঃখের কাঁদুনি গেয়েই পেতে চাইবে, তা'তে তার বুদ্ধিবৃত্তি, কর্মশক্তি কিছুই খুলবে না, সে পঙ্গু হয়েই থাকবে। এতে তারও লাভ নেই, তোমারও লাভ নেই, সমাজেরও লাভ নেই। তাই দেওয়ার অভ‍্যাস গজিয়ে দিতে হবে, যেন তেন প্রকারেণ দেওয়া-নেওয়ার সামঞ্জস্য থাকলেই, সত্তার স্বস্থতা বজায় থাকে। কাউকে যদি কিছু দাও, অন‍্যের প্রয়োজনে আবার তার কাছ থেকে নেবে, তার activity (কর্ম্ম) বাড়িয়ে তাকে তোমার স্বার্থ করে তুলতে হবে।


শ্রীশ্রীঠাকুর--এটা ঠিক জেনো- নিজের বৃহত্তর পরিবেশকে যদি সুস্থ, স্বস্থ রাখার দায়িত্ব গ্ৰহণ না কর, লাখ চেষ্টা ক'রেও তুমি তোমার পরিবারকে ভালো রাখতে পারবে না। নিজেকে ছোট ক'রে ভেবেই তো ঠ'কে যাও, মনে রেখো তুমি তোমার ইষ্টের, তাই তুমি সবার, কারণ সকলের জন‍্যই তিনি আবার তুমি যদি সকলের হও, সবাই তোমার, তোমার কি কোন ইতি আছে? ইয়াত্তা আছে-যে তুমি থেমে যাবে? ঘরে ঘরে তোমার পরমাত্মীয়, দেশে-দেশে তোমার ভাই বন্ধু, মানুষের হৃদয়ে হৃদয়ে তোমার বাড়ীঘর, সকলের ক্ষেত খামার-গোলায় তোমার খাবার অন্ন, তোমার আবার পরোয়া কিসের? তাই বলি, অভাব কিছুরই নেই, অভাব আছে শুধু ভাবের, ভাব মানে 'চিন্তা নয়, 'হওয়া'। ইষ্ট তোমার ভাব হো'ক, অর্থাৎ তুমি সক্রিয়ভাবে ইষ্টসর্ব্বস্ব হ'য়ে ওঠ, আর সেই সঙ্গে-সঙ্গে ইষ্টের যারা, তারা তোমার আপন হ'য়ে উঠুক-বাস্তবে দেখবে মা-লক্ষী তোমার সুসার করতে নিজ হ'তেই এগিয়ে আসবেন।


আঃপ্রঃ,২খণ্ড।।






5.




"নিজের ভুলগুলি নিজে ধরতে শেখাই ভাল। নাম-ধ্যান,আত্মবিচার,আত্মবিশ্লেষণ যত করবে ততই সব নিজের কাছে ধরা পড়বে।আর,যাদের অভ্যাস-ব্যবহার ও চরিত্র সুগঠিত,তাদের সঙ্গ করা লাগে।ওতে খুব লাভ হয়। সাধুসঙ্গের প্রশংসা সর্ব্বশাস্ত্রেই পাওয়া যায়। সাধু বলতে আমি বুঝি সুকেন্দ্রিক ও করিৎকর্ম্মা লোক।"- শ্রীশ্রীঠাকুর।  

(আঃ প্রঃ- ১০ পৃঃ- ১৮৪)




6.





কথাপ্রসঙ্গে ভদ্রলােক জিজ্ঞাসা করলেন—সাধনার পথে একাগ্রতার বাধা কিভাবে দূর করা যায় ?


শ্রীশ্রীঠাকুরঃ—আসল জিনিস হ'লাে যােগ অর্থাৎ ইষ্টের প্রতি ভক্তি, ভালবাসা,অনুরাগ। ঐ নেশা যত বাড়তে থাকে, ততই দেখি ভিতর-বাইরের যে-কোন বাধাই আসুক না কেন, তা' দিয়ে ইষ্টের স্বার্থ ও প্রতিষ্ঠা কতখানি হাসিল করতে পারি। কোন চিন্তাকে জোর ক'রে চাপা দিতে গেলে, তা আরও পেয়ে বসে। ও’তে তা’ adjusted (নিয়ন্ত্রিত) হয় না। কিন্তু যা'-কিছুকে ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠায় লাগাবার বুদ্ধি থাকলে সেগুলি শায়েস্তা হ'য়ে আসে। যেগুলি অসুবিধার কারণ হ'য়েছিল, সেগুলি সুবিধার উপকরণ হ'য়ে ওঠে। তা' থেকে আসে experience (অভিজ্ঞতা), experience (অভিজ্ঞতা) থেকে হয় Knowledge (জ্ঞান), Knowledge (জ্ঞান) পেকে ওঠে wisdom-এ (প্রজ্ঞায়)। 


(আলােচনা-প্রসঙ্গে-৯)

৫ই শ্রাবণ, মঙ্গলবার, ১৩৫৪ (ইং ২২।৭। ১৯৪৭)




6.




২৮শে জ্যৈষ্ঠ,১৩৫৬,শনিবার (ইং১১/৬/৪৯)


সুধাংশুদা----এখানকার একজন ছোট ছেলে যা' জানে, তাও অসম্ভব। বাইরের লোকের ধারণা যে আমাদের সঙ্গে তর্কে পারার জো নাই।


শ্রীশ্রীঠাকুর------ আমরা তর্ক ক'রে জিততে চাই না,কিন্তু মানুষকে convince (প্রত্যয়দীপ্ত) ক'রে exalted (উন্নীত)ক'রে তুলতে চাই। ভুল বুঝে থাকা আমারও লোকসান, তারও লোকসান। ভুল যদি ভাল হ'তো, সুখের হ'তো, তাহ'লে ভুল নিয়ে চলায় দোষ ছিল না।ভুল যখন দুঃখের, তাতে নিজের ও অপরের সুখ-শান্তি যখন ব্যাহত হয়,তখন সে ভুল পুষে রাখা চলে না।কারণ, সেটা সবারই মঙ্গলের পরিপন্থী, তাই আমি বুঝি, তর্কে জেতার বালাই আমাদের থাকা উচিত নয়।


[আলোচনা-প্রসঙ্গে--সপ্তদশ খণ্ড]

জয়গুরু।






7.









Comments

Popular posts from this blog